১ কেজি আপেলের দাম কত ২০২৫

বাংলাদেশে আপেলের দাম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই বছর আগেও এক কেজি আপেল ১০০ থেকে ১২০ টাকায় পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে সেই আপেল ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আপেলের দাম কিছুটা কমে ২৪৫-২৬০ টাকায় নেমে এসেছিল, যা ১৫ দিন আগের ২৬০-২৮০ টাকার তুলনায় কম। তবে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নতুন করে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আপেলসহ অন্যান্য ফলের দাম আবারও বেড়েছে। ফলে, ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে এক কেজি আপেল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফলের দাম বৃদ্ধির পেছনে আমদানি শুল্ক ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধিকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নতুন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে প্রতি কেজি আপেল, কমলা ও মাল্টায় শুল্ক ১৬ টাকা এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ২০ টাকার বেশি বেড়েছে।

দাম বৃদ্ধির কারণে আপেলের বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছেন, যাতে ফলের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আসে এবং বিক্রি বৃদ্ধি পায়।

বর্তমানে ১ কেজি আপেলের দাম কত?

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার খুচরা বাজারে এক কেজি আপেল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, সুপারশপে গেলে আরও ৪০-৫০ টাকা বাড়তি গুনতে হতে পারে। ফলের বাজারের এই অস্থিরতা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে পুষ্টিকর ফল গ্রহণ করতে পারে।

  • বর্তমানে ১ কেজি আপেলের দামঃ ২৬০ টাকা থেকে ৪৫০টাকা।

জাতবেদে আপেলের দাম ভিন্ন হতে পারে। তাই কেনার আগে অবশ্যই দাম যাচাই করবেন।

আপেলের ধরন ও জাত

বাংলাদেশে আপেল মূলত আমদানি করা হয়, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই কিছু আপেল জাতের চাষ শুরু হয়েছে। নিম্নোক্ত আপেল জাতগুলো বাংলাদেশে পাওয়া যায়:

  • আনা আপেল (Anna Apple): এটি একটি হাইব্রিড জাত, যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। আনা আপেল গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ফলনও ভালো হয়। ফলগুলি মিষ্টি ও রসালো।
  • ডরসেট গোল্ডেন (Dorset Golden): এই জাতটি বাংলাদেশের জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। ফলগুলি সোনালি রঙের হয় এবং স্বাদে মিষ্টি।
  • ফুজি আপেল (Fuji Apple): ফুজি আপেল গাছ বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে চাষ করা হচ্ছে। ফলগুলি বড় আকারের, মিষ্টি এবং খাস্তা।
  • সামার গ্রিন আপেল (Summer Green Apple): বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে উপযোগী একটি বিশেষ আপেল জাত। এই জাতের গাছ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

উপরোক্ত জাতগুলোর মধ্যে আনা আপেল এবং ডরসেট গোল্ডেন আপেল বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বিশেষভাবে সফলভাবে চাষ করা যায়। তবে, আপেল চাষের জন্য সঠিক পরিচর্যা, মাটি প্রস্তুতি এবং নিয়মিত যত্ন নিতে হয়।

আপেলের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা

আপেল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল, যা স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাচীনকাল থেকেই “প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায়” এই কথাটি প্রচলিত আছে। আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আপেলের প্রধান পুষ্টিগুণসমূহ

একটি মাঝারি আকারের আপেলে (প্রায় ১৮২ গ্রাম) নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান থাকে:

  • ক্যালরি: ৯৫
  • কার্বোহাইড্রেট: ২৫ গ্রাম
  • ডায়েটারি ফাইবার: ৪ গ্রাম
  • চিনি: ১৯ গ্রাম
  • প্রোটিন: ০.৫ গ্রাম
  • ভিটামিন সি: দৈনিক চাহিদার ১৪%
  • ভিটামিন এ: সামান্য পরিমাণ
  • পটাশিয়াম: ১৯৫ মিলিগ্রাম
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: পলিফেনলস, কেরোটিনয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড ইত্যাদি।

আপেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা

হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক

আপেলের মধ্যে থাকা ফাইবার, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা

আপেলে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

আপেলের ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী হতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

আপেল কম ক্যালরিযুক্ত হলেও এতে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, যা অপ্রয়োজনীয় খাওয়া কমাতে সাহায্য করে এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে

আপেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান শরীর থেকে ক্ষতিকারক ফ্রি-র‍্যাডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

ত্বকের যত্নে উপকারী

আপেলে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, বলিরেখা কমায় এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে

আপেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনলস মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

আপেল খাওয়ার সঠিক সময়

সর্বোত্তম ফল পেতে, আপেল খাওয়ার সঠিক সময় হলো:

  • সকালে খালি পেটে: হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়।
  • দুপুরে খাবারের পর: হজমে সহায়ক।
  • রাতে এড়িয়ে চলুন: বেশি ফাইবার থাকায় রাতে খেলে হজম সমস্যা হতে পারে।

আরও পড়ুন: বর্তমানে আঙ্গুরের দাম কত | ১ কেজি আঙ্গুরের দাম কত ২০২৫

উপসংহার

উপরের আপেলের জাত ধরন ও দাম পারলেন। আপেল একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল, যা নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। তাই প্রতিদিন অন্তত একটি আপেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য।

Leave a Comment