আঙ্গুর বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফল, যা বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়। এটি সরাসরি খাওয়া ছাড়াও জুস, জেলি এবং বিভিন্ন ডেজার্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আঙ্গুর শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এটি ভিটামিন সি, কে এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের আঙ্গুর পাওয়া যায় এবং এর দাম ঋতু, আমদানি ও বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। এই নিবন্ধে আমরা আঙ্গুরের বিভিন্ন ধরন, তাদের দাম এবং সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আঙ্গুরের ধরন:
বাংলাদেশে আঙ্গুর একটি জনপ্রিয় ফল, যা স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য বেশ চাহিদাসম্পন্ন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের আঙ্গুর পাওয়া যায়, যা দামের ভিন্নতা তৈরি করে। বাংলাদেশে ৩ ধরনের আঙ্গুর বেশ জনপ্রিয় সেই ৩ ধরনের আঙ্গুর কি এর পুষ্টিগুণ নিচে দেওয়া হল।
১. সবুজ আঙ্গুর:
- মিষ্টি ও খাস্তা স্বাদের জন্য পরিচিত।
- সাধারণত ক্যালিফোর্নিয়া ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
- সালাদ ও জুস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
২. লাল আঙ্গুর:
- এটির স্বাদ মিষ্টি ও রসালো।
- এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- সাধারণত দেশীয় ও বিদেশি দুই ধরনের লাল আঙ্গুর পাওয়া যায়।
৩. কালো আঙ্গুর:
- গাঢ় রঙের ও মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয়।
- এটি হজমে সহায়তা করে এবং এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
- ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়।
আজকের আঙ্গুরের দাম প্রতি কেজি (২০২৫)
বর্তমানে বাংলাদেশে আঙ্গুরের দাম বিভিন্ন বাজারে ভিন্ন হতে পারে। নিচে কিছু আপডেটেড দাম দেওয়া হলো:
- সবুজ আঙ্গুর: ২৫০-৩০০ টাকা প্রতি কেজি।
- লাল আঙ্গুর: ৩০০-৩৮০ টাকা প্রতি কেজি।
- কালো আঙ্গুর: ৩৫০-৪৫০ টাকা প্রতি কেজি।
আঙ্গুরের পুষ্টিগুণ
আঙ্গুর একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল, যা বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আঙ্গুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ভিটামিন ও খনিজ:
আঙ্গুরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে, যেমন:
- ভিটামিন সি: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে।
- ভিটামিন কে: রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
- পটাশিয়াম: হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- ফোলেট: গর্ভবতী নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এটি ভ্রূণের বিকাশে সহায়তা করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:
আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যেমন:
- রেসভারেট্রল: এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।
- ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনল: দেহের কোষগুলোর ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক:
আঙ্গুর খেলে রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়।
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক:
আঙ্গুরের ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
আঙ্গুর ক্যালোরিতে কম এবং ফাইবারসমৃদ্ধ, যা ক্ষুধা কমায় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি:
আঙ্গুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে। এতে থাকা রেসভারেট্রল আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
ত্বকের যত্নে উপকারী:
আঙ্গুরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে।
আঙ্গুর শুধুমাত্র সুস্বাদু ফল নয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত পরিমাণে আঙ্গুর খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করা যায়।
আসল আঙ্গুর চেনার উপায়
বাংলাদেশের বাজারে দুই ধরনের আঙ্গুর বেশি দেখা যায় – মনাক্কা (রেজিন বা শুকনো আঙ্গুর) এবং আসল তাজা আঙ্গুর। অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা আসল আঙ্গুরের নামে মনাক্ষা বা নিম্নমানের আঙ্গুর বিক্রি করার চেষ্টা করেন। তাই আঙ্গুর কেনার সময় সঠিকভাবে পার্থক্য বোঝা জরুরি। নিচে মনাক্ষা ও আসল আঙ্গুর চেনার কিছু সহজ উপায় তুলে ধরা হলো:
আসল তাজা আঙ্গুর চেনার উপায়:

আসল আঙ্গুরের খোসা মসৃণ, টানটান ও চকচকে হয়ে থাকে, যা মনাক্ষার মতো কুঁচকানো নয়। লাল, সবুজ বা কালো রঙের উজ্জ্বলতা দেখে তাজা আঙ্গুর সহজেই চেনা যায়। তাজা আঙ্গুর কামড় দিলে রসযুক্ত হয় এবং স্বাদে সাধারণত কম মিষ্টি ও হালকা টক হতে পারে। আসল আঙ্গুর সাধারণত মনাক্ষার তুলনায় বড় এবং প্রতিটি দানা প্রায় একই আকৃতির হয়। তাজা আঙ্গুরের ডাঁটা সবুজ ও সতেজ দেখায়, যেখানে মনাক্ষার ক্ষেত্রে এটি শুকিয়ে বাদামী হয়।
আসল তাজা আঙ্গুর এবং মনাক্ষার মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য রঙ, আকার, স্বাদ ও টেক্সচারের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। ভালো মানের আসল আঙ্গুর কেনার জন্য সতর্কতার সাথে এই বৈশিষ্ট্যগুলো যাচাই করা দরকার, যাতে সঠিক পণ্য কেনা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: ১ কেজি কমলার দাম কত ২০২৫
উপসংহার
আঙ্গুর একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধ, হজম শক্তি বৃদ্ধি এবং ত্বকের যত্নে সহায়ক। এছাড়া আঙ্গুর স্বল্প ক্যালোরি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশের বাজারে আঙ্গুরের দাম সাধারণত মৌসুম, উৎপত্তিস্থল এবং গুণগত মানের উপর নির্ভর করে। দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনের আঙ্গুরই বাজারে পাওয়া যায়, যার মধ্যে বিদেশি আঙ্গুরের দাম তুলনামূলক বেশি হলেও এর স্বাদ ও গুণগত মান উন্নত হয়ে থাকে।
সুতরাং, আঙ্গুর কেনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করে তাজা ও রাসায়নিকমুক্ত আঙ্গুর নির্বাচন করা উচিত, যাতে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা নিশ্চিত হয়। সঠিক দামে ভালো মানের আঙ্গুর কিনে পরিবারের সবাইকে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে উপহার দেওয়া সম্ভব।