তরমুজ বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল যা গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি সুস্বাদু, রসালো এবং তৃষ্ণা নিবারণকারী একটি ফল। তরমুজ শুধুমাত্র স্বাদে ভালো নয়, বরং এটি বিভিন্ন পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এই আর্টিকেলে আমরা তরমুজের বর্তমান বাজারদর, এর পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং কেনার সময় কী কী বিষয় বিবেচনা করা উচিত তা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
তরমুজের বর্তমান দাম কত?
বাংলাদেশে তরমুজের দাম মৌসুম, অঞ্চল এবং সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত মার্চ থেকে জুন মাসে তরমুজের চাহিদা বেশি থাকে, ফলে এই সময়ে এর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।
বিভিন্ন অঞ্চলে তরমুজের দাম
- ঢাকা: প্রতি কেজি ৬০-১০০ টাকা (প্রকারভেদে)
- চট্টগ্রাম: প্রতি কেজি ৫০-৯০ টাকা
- রাজশাহী: প্রতি কেজি ৪৫-৮৫ টাকা
- খুলনা: প্রতি কেজি ৫০-৯৫ টাকা
- সিলেট: প্রতি কেজি ৫৫-১০০ টাকা
প্রতি পিচ তরমুজের দাম গড়ে ২০০-৬০০ টাকা সাইজভেদে দাম কমবেশ হয়ে থাকে।
তবে, খুচরা ও পাইকারি বাজারে তরমুজের দামে পার্থক্য থাকে। পাইকারি বাজারে তরমুজ অপেক্ষাকৃত সস্তায় পাওয়া যায়। এবং সিজনে সাধারণত কম দামে পাওয়া যায়।
তরমুজের পুষ্টিগুণ

তরমুজ পানিসমৃদ্ধ একটি ফল যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ।
প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে পুষ্টিগুণ
উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালোরি | ৩০ কিলোক্যালোরি |
পানি | ৯২% |
প্রোটিন | ০.৬ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.২ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৭.৬ গ্রাম |
ফাইবার | ০.৪ গ্রাম |
চিনি | ৬.২ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৮.১ মিগ্রা |
পটাসিয়াম | ১১২ মিগ্রা |
লাইকোপিন | ৪.৫ মিগ্রা |
তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতা
তরমুজ কেবলমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।
শরীরকে হাইড্রেট রাখে
তরমুজে ৯২% পানি থাকায় এটি দেহের পানির চাহিদা মেটাতে সহায়ক। বিশেষ করে গরমের দিনে এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
হজমশক্তি উন্নত করে
এতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো
তরমুজে থাকা লাইকোপিন এবং পটাসিয়াম হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও ভূমিকা রাখে।
ত্বকের জন্য উপকারী
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় তরমুজ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং বলিরেখা প্রতিরোধ করে।
কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
তরমুজ প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে এবং কিডনি থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
কম ক্যালোরি এবং বেশি পানি থাকায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
লাইকোপিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
তরমুজ কেনার সময় যা যা লক্ষ্য রাখা উচিত
তরমুজ কেনার সময় কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখলে আপনি ভালো মানের তরমুজ পেতে পারেন।
তরমুজের রঙ
একটি ভালো তরমুজের খোসার রঙ উজ্জ্বল সবুজ হওয়া উচিত এবং এর ওপর হলুদচে দাগ থাকলে এটি পরিপক্ক হওয়ার লক্ষণ।
আওয়াজ পরীক্ষা করা
তরমুজ টোকা দিলে যদি ফাঁপা আওয়াজ হয়, তাহলে এটি ভালোভাবে পরিপক্ক।
আকার ও ওজন
একটি ভালো তরমুজ সাধারণত ভারী হয়ে থাকে এবং আকৃতিতে গোল বা ডিম্বাকৃতি হয়।
খোসার অবস্থা
খোসায় কোনো দাগ বা চিড় থাকলে সেটি নষ্ট হতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।
তরমুজ সংরক্ষণের উপায়
তরমুজ সংরক্ষণ করলে এটি দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
১. পুরো তরমুজ
- ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৭-১০ দিন রাখা যায়।
- ফ্রিজে রাখলে ২-৩ সপ্তাহ ভালো থাকে।
২. কাটা তরমুজ
- কাটা তরমুজ এয়ারটাইট কন্টেইনারে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
- ৩-৪ দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলা ভালো।
আরপ পড়ুনঃ ১ কেজি চেরি ফলের দাম ২০২৫| চেরি ফলের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
উপসংহার
তরমুজ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল, যা গরমের দিনে শরীরকে প্রশান্তি দেয়। এটি শুধু যে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা নয়, বরং এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখে, হজমশক্তি উন্নত করে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। তরমুজ কেনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করলে ভালো মানের তরমুজ কেনা সম্ভব। তাছাড়া, তরমুজের দাম মৌসুমভেদে পরিবর্তিত হয়, তাই বাজার যাচাই করে কিনলে ভালো মানের তরমুজ সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়।